আইসিসির ১১.১ ও ১১.৩ ধারায় সাকিবের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর

 


গতকাল বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ছিল এক দুঃখজনক দিন, যখন সাকিব আল হাসানের বোলিং অ্যাকশন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে দেশের ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সাকিবের বোলিং অ্যাকশন এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলার সময় তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে, সারের হয়ে খেলা অবস্থায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তা অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হয়।


বার্মিংহামের লাফবরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় সাকিবের কনুই ১৫ ডিগ্রি সীমা ছাড়িয়ে গেছে, যা আইসিসির নিয়মের বিরুদ্ধ। আইসিসি অনুযায়ী, বৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য এই সীমা অতিক্রম করা যাবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ করেছে ইংলিশ ঘরোয়া প্রতিযোগিতায়।


ইসিবির এই নিষেধাজ্ঞা সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। আইসিসির ১১.৩ ধারার অনুযায়ী, কোনো বোলারের বোলিং অ্যাকশন যদি একটি স্বীকৃত পরীক্ষাগারে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হয়, তবে সেই নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও কার্যকর হবে। পাশাপাশি, এটি অন্যান্য জাতীয় ফেডারেশন এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করা এখন এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।


বোলিং অ্যাকশন সংশোধন না করা পর্যন্ত সাকিবকে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতেও নিষিদ্ধ হতে হবে। ফলে বিপিএল, পিএসএল কিংবা আইপিএলসহ অন্যান্য লিগে তার খেলার সুযোগ এখন অনিশ্চিত। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি দেশের ক্রিকেট বোর্ডের অনুমতিতে বোলিং চালিয়ে যেতে পারবেন।


আইসিসির ১১.৪ ধারায় বলা হয়েছে, "নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা সত্ত্বেও জাতীয় ক্রিকেট ফেডারেশন খেলোয়াড়কে ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় বোলিং করার অনুমতি দিতে পারে, তবে তা নির্দিষ্ট সীমারেখা বজায় রেখে।"


এখন প্রশ্ন উঠছে, সাকিব কি এই সুযোগ পাবেন? সাম্প্রতিক সময়ে সাকিবের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট খেলার জন্য দেশে ফিরতে না পারা এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তার ওপর জনরোষ সৃষ্টি হয়েছে, যা তার বিপিএল খেলা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।


সাকিবের আন্তর্জাতিক এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে বোলিং নিষেধাজ্ঞা তার ক্যারিয়ারের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। চোখের সমস্যার কারণে ব্যাটিংয়ের আগের ধার হারানো সাকিবের একমাত্র কার্যকরী অস্ত্র ছিল তার বোলিং, এবং সেটিতেও ত্রুটি ধরা পড়ায় তার ক্যারিয়ারের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।


তবে সাকিব যদি চান, তিনি আবারো তার বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দিতে পারেন। বোলিং অ্যাকশন ঠিক করে তিনি আন্তর্জাতিক এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন, তবে তার জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম এবং মনোযোগ। সাকিবের মতো একজন তারকা ক্রিকেটারের জন্য এটি হতে পারে তার ক্যারিয়ার বাঁচানোর শেষ সুযোগ।


যতই চ্যালেঞ্জ কঠিন হোক, সাকিবের মতো অভিজ্ঞ এবং লড়াকু ক্রিকেটার যদি নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন, তবে তিনি আবারো দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে সক্ষম হবেন। তবে তার আগে তাকে কাটিয়ে উঠতে হবে এই সংকট।

Comments

Popular posts from this blog

১৮ বছরে এই প্রথম এমন বিরল ঘটনার সাক্ষী হলো বাংলাদেশ

IPL নিলাম: ধোনির চাওয়াতেই রেকর্ড মুল্যে আইপিএলে দল পেলেন সাকিব

টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির নতুন অধিনায়কের নাম ঘোষণা করলো বিসিবি